~ Chitrakote | Kangera Valley | Tirathgarh ~





"ভারতীয় নায়াগ্রা ফলস" হ্যাঁ এভাবেই বলা চলে যেটা দেখেছিলাম সচক্ষে।ছোটবেলা থেকেই ভূগোল বইতে বা অনেক জায়গায় বিশ্বপ্রসিদ্ধ নায়াগ্রা ফলসের ছবি দেখেছিলাম।বেশ ইচ্ছাও হত যাওয়ার।তবে এই ভারত ভূখন্ডেও যে অবিকল সেটিরই যমজ ভাই অবস্থান করছে তা আমার জানা ছিল না।আমাদের ছোটোবেলার বন্ধুদের একটি গ্রুপ আছে যারা প্রতিবছরই একবার বাইরে বেড়াতে যাই।শুরু হয়েছিল হায়দ্রাবাদ থেকে।কর্মসূত্রে ইন্দ্রনীল সেখানকার বাসিন্দা তাই থাকার জায়গার অভাব হয়নি।আর তারপর থেকে প্রতি বছরই আমরা একসাথে কোনো না কোনো জায়গায় বেড়াতে গেছিলাম।আমাদের গ্রুপের পাঁচজন আমি ইন্দ্র অভি শুভ্র হারীত কাজের জন্য পাঁচ জায়গায় থাকলেও ঘোরার অদম্য ইচ্ছায় বছরের একটা সময় দেখা করেই নিতাম বাইরে কোথাও।তবে আমাদের এই ভ্রমণ কাহিনী শুরু হয়েছিল ভাইজাগ থেকে।অন্ধ্রপ্রদেশের একটি মনোরম জায়গা হল ভিশাখাপাট্টানম বা ভাইজাগ।এটি বাস্তবিকই একটি বন্দর নগর। কর্মসূত্রে অভি মানে অভিরুপ ভাইজাগ ষ্টীলপ্লান্টের জুনিয়র ম্যানেজার এবং ভাইজাগেই ছিল।তাই মাঝে মাঝেই আমরা ভাইজাগ ঘুরে যেতাম।ভাইজাগ শহরটির পরিষ্কার রাস্তা ঘাট জনজীবন অনেকবারই আমাকে মুগ্ধ করেছে।এছাড়াও বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী হওয়ার দরুণ এখানে অনেকগুল সমুদ্র সৈকতও আছে ঘোরার জন্য যেগুলি রুপ-লাবণ্যে অতুলনীয়।তবে এবারে ভাইজাগের কথা বেশী বলবনা।এই কাহিনী শুধুমাত্র "ভারতীয় নায়াগ্রা ফলস"কে নিয়েই, যার সৌন্দর্য দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছিলাম, ব্যপ্তি দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম, রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম এবং নতজানু হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম তার অমোঘ ব্যক্তিত্বের সামনে।


বঙ্গবাসী হিসেবে ভরা বরষার যৌবন দেখার অভিজ্ঞতা অনেক বছরের।কিন্তু ভাবিনি কোনোদিন বরষার রুপ নতুনভাবে প্রত্যক্ষ করবো।ভাইজাগ থেকে আমাদের গন্তব্যস্থল ছিল ছত্তিসগড়ের জগদলপুর।এই জগদলপুর জায়গাটি ভীষণ প্রসিদ্ধ এই স্থানের একটি বিশেষ জলপ্রপাত বা ওয়াটার ফলসের কারণে যেটির নাম চিত্রকূট জলপ্রপাত ।লোকমুখে শুনেছিলাম এই জলপ্রপাতটি দেখতে প্রসিদ্ধ নায়গ্রা ফলসের মতনই।তাই যাচাই করতে বেরিয়ে পরলাম আমরা পাঁচজন ভাইজাগ থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করে।আমরা ভাইজাগ থেকে যাত্রা শুরু করি ভোর ছটায়।ম্যাপ দেখে যা বুঝেছিলাম জগদলপুর পৌছতে ৬/৭ ঘন্টা লেগে যাবে গাড়ীতে।জগদলপুর ছত্তিসগড়ের বাস্তার জেলার একটা অংশ বলা চলে।আমার কথিত চিত্রকূট জলপ্রপাত দেখার জন্যই বরষাকালে ভীড় হয় শুনেছিলাম।এছাড়াও তীরাথগড় জলপ্রপাত এবং কাঙ্গার ভ্যালী ন্যাশনাল পারক খুবই বিখ্যাত এই জেলার।

ছত্তিসগড় সীমান্তে যখন আমরা অনুমতিপত্র নিলাম তখনি বেজে গেছিল দুপুর দুটো।রাস্তা খুবই সুন্দর ছিল তার সাথে বরষার ঘন কালো মেঘ আর দুপাশের ঘন সবুজ ধানক্ষেত মিলিয়ে খুব একটা মন্দ লাগছিল না।জগদলপুর শহরে আমরা যখন প্রবেশ করলাম তখন প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।শহর থেকে চিত্রকূট জলপ্রপাত আরও ২০ কিলোমিটার দূরে ছিল সেইজন্য মোটামুটি চিত্রকূট জলপ্রপাত অবধি পৌছতে পৌছতে ৪ টে বেজে যায়।প্রথম যেটা চোখে পড়ে একটা বিশাল বড়ো শিবমন্দির এবং তার সামনে অল্প একটু দূরে চিত্রকূট জলপ্রপাত যেটিকে বাস্তবিকই নায়গ্রা ফলসের যমজ ভাই বলাই যায়।বরষার বৃষ্টি চিত্রকূট জলপ্রপাতের প্রবল ধারা এবং শিবমন্দির থেকে আগত শঙ্খধ্বনি মায়াবী পরিবেশের সৃষ্টি করে দিয়েছিল।একটা মাত্র ছাতা সম্বল করে আমরা নেমে পরলাম গাড়ী থেকে এবং জলপ্রপাতের দিকে হাটতে শুরু করে দিলাম ভিজতে ভিজতে।




আমি জীবনে অনেক জলপ্রপাত দেখেছি কিন্তু তারা চিত্রকূটের ব্যক্তিত্যের সামনে কিছুই না।অপার জলরাশি যখন মাটিতে গিয়ে আছড়ে পড়ছিল এবং তার থেকে উদগত বাষ্পরাশি কুয়াশার সৃষ্টি করছিল।ছুঁয়ে দেখেছিলাম চিত্রকূটকে।অশান্ত তবু সুন্দর।সত্যেন্দ্রনাথ দত্তর লেখা ঝর্ণা কবিতাটা মনে পড়ে যাচ্ছিল।আমি ওনার মতো লিখতে পারিনা তবু কিছুক্ষন ওখানে থাকলে হয়তো লিখেও ফেলতাম কোনো কবিতা।আমরা বেশ কিছুক্ষণ বসে ছিলাম জলপ্রপাতের পাথরের ওপর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই।"A thing of beauty is a joy forever" অনেকবার বললেও সেবারই প্রথম উপলব্ধি করেছিলাম।

সেইদিন রাতে আমরা জগদলপুরে কাটিযে পরেরদিন যাত্রা শুরু করলাম তীরাথগড় জলপ্রপাত আর কাঙ্গরা ভ্যালীর উদ্দেশ্যে।তীরথগড় জলপ্রপাত আর কাঙ্গরা ভ্যালী দুটোই শহর থেকে ৩৫-৪০ কিমি দূরে অবস্থিত ছিল্।আমাদের গাড়ি করে পৌছাতে এক ঘন্টা লেগে যায়।পথে আমরা একটি ধাবায় নেমে সকালের খাবার খেয়ে নিয়েছিলাম্।কাঙ্গরা ভ্যালীর মধ্যে দিয়েই যেতে হতো তীরথগড় জলপ্রপাত।জায়গাটি বেশ শান্ত আর নীর্জন ছিল।সত্যি বলতে কি আমরা বর্ষাকালে গেছিলাম বলেই জলপ্রপাতের সেই সুন্দরতা উপভোগ করতে পেরেছিলাম।জলপ্রপাতের প্রবেশের পথে সিঁড়ি দিয়ে আমাদের অনেকটা পথ নীচে নামতে হয়েছিল।সেই পথ দিয়ে নামার সময়ই প্রথম আমরা তিরথগড় জলপ্রপাতকে দেখতে পাই।



কষ্টিপাথরের ওপর দিয়ে দুগ্ধপ্রবাহ করলে যেরকম দেখাবে , ঠীক সেইরকমই দেখাচ্ছিল ঝর্ণাটিকে।আমরা মুগ্ধ হয়েছিলাম তার সেই অনিন্দ্যসুন্দর রুপ দেখে।আমরা খুব কাছে গিয়ে ছুয়ে দেখেছিলাম ঝর্ণাটির জল এবং সেই কালো প্রাচীরের মত সেই স্থাপত্যকে।বেশ কিছুখণ আমরা ঘুরে বেড়িয়েছিলাম সেই জায়্গায়্।সেখানে একটি ছোটো মন্দিরও দেখলাম কেউ প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে।আরোও বেশ কিছুখণ বসার ইচ্ছে থাকলেও আর বসতে পারিনি আমরা যেহেতু ফেরারও তাড়া ছিল আমাদের। চিত্রকূট আর তীরথগড়কে ছেড়ে আবার ফিরে আসতে হলো আমাদের সেই নাগরিক সভ্যতাতেই।

আজও সময় পেলে ভাবি য্দী আবার যাওয়া যেত ফিরে সেই ঝর্ণার ধারে।বন্ধুদের সাথেও এই নিয়ে অনেক কথা হয়।হয়্ত ফিরে যাব আবার কোনো বর্ষায়্,আবার মুক্তির সন্ধানে,নতুন ভাবে জীবন কে ফিরে পেতে । 

5 Comments

  1. Seriously, darun enjoy korechilam.. :)

    ReplyDelete
  2. Seriously, darun enjoy korechilam.. :)

    ReplyDelete
  3. Khub valo..Abar upovog korlam
    Ha jaboi fire abar ekdin, sei osanto sroter tire.
    Snato korbo nijer mon, jta kolushito hoe gache vir e.
    Subhra

    ReplyDelete
  4. Lekhata asadharon. Purono smriti gulo vir kore elo..

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post